বই রিভিউ: 1984

1984

জর্জ অরওয়েলের "1984" এর একটা চ্যাপ্টারে উপন্যাসের নায়ক উইনস্টনের চাকুরীর বর্ণনা দেওয়া ছিলো। সে যেই ডিপার্টমেন্টে কাজ করতো সেটার কাজ ছিল সোজা বাংলায় "ইতিহাস পরিবর্তন" করা (যেই কাজটা এখনকার চেতনাজীবিরা অহরহ একটু ভিন্নভাবে করছেন। )। উইনস্টন কাজটা কিভাবে করতো সেদিকে একটু নজর দেওয়া যাক। গল্পের এন্টাগনিস্ট হলেন "বিগ ব্রাদার"। তিনি ১৯৮৪ সালের একজন শাসক। কঠোর হাতে তিনি যে কোন ধরণের বিরোধীতাকে দমন করেন। তিনি যা বলেন তাই তার এম্পায়ারের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত ।

কিন্তু একজন মানুষের সব কথাই কিভাবে অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত হতে পারে ? এখানেই বিগ ব্রাদারের খেলা। মনে করুন, বিগ ব্রাদার কোন একটা সংবাদ সম্মেলনে বললেন যে, "আগামী বছরের জানুয়ারীর মধ্যে আমাদের দেশ সিঙ্গাপুরের মতোন উন্নত হয়ে যাবে।" কিন্তু পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন প্রকার সমস্যার কারণে সেটা সম্ভব হলোনা। এখন সমালোচকেরা তো বলতেই পারেন, "আপনি কচুটা জানেন। আপনি এইটা বলসিলেন। কিন্তু এটা হয়নাই।" বিগ ব্রাদার তখন বলবেন যে, "আমি যে এটা বলসিলাম, তার প্রমাণ কই?"। সমালোচকেরা তখন পত্রিকার পাতা উলটাইবেন প্রমাণ দেখানোর জন্যে। কিন্তু পত্রিকায় তো লেখা যে, বিগ ব্রাদার জানুয়ারির ঐ সম্মেলনে বলেছেন যে, "জানুয়ারীর মধ্যে দেশের তেমন উন্নতি সম্ভবপর নাও হতে পারে।"

কোথায় গেলো সেই প্রমাণ ? উইনস্টনের এই ডিপার্টমেন্টের কাজ ই হলো, যে কোন ধরণের "সত্য-বিরোধী" লেখা ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা। বিগ-ব্রাদারের ভবিষ্যদ্বাণীকে সত্যে রূপান্তর করে, ডাহা মিথ্যাকে লিপিবদ্ধ করে রাখে এই ডিপার্টমেন্ট। সকল ধরণের বই, পত্রিকা, জার্নাল থেকে ঐ ঘটনার ইতিবৃত্ত মুছে ফেলে এই ডিপার্টমেন্ট।

একটা দল কিংবা আদর্শ যত ছোট হোক কিংবা যত নিম্ন মানের হোক না কেন, তারা যখন তাদের আইডিয়াকে লিপিবদ্ধ করে কিংবা কাগজের পাতায় নিয়ে আসে তখন তাদের ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়। সত্যকে বানিয়ে ফেলা যায় মিথ্যা। আলোকে চিৎকার করে অন্ধকার ডাকতে থাকুন, মানুষ এক সময় তাকে অন্ধকার বলেই চিনবে। ১৯৪৭ এ দেশ ভাগের পরে এক দল চিৎকার করতে থাকলো, সেটাই এক সময় ইতিহাস হয়ে গেলো। একদল হারামজাদা ২০১৭ তে এসে ওড়নাকে সাম্প্রদায়িক বলে ঘেউ ঘেউ করছে। সেটাই হয়তো ইতিহাস হয়ে যাবে, অনেকে সত্য বলে মানবে।

ইউরোপিয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিপ্লবে ছাপানো বইয়ের প্রভাব ব্যাপক। মুসলিম সাম্রাজ্য যখন প্রিন্টিং প্রেস নিষিদ্ধ করছিলো, তাদের ধর্মকে স্যাক্রেড রাখার জন্য, সমগ্র ইউরোপে তখন জ্ঞানের জয়জয়কার। হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ বই তারা ছাপাচ্ছিলো।

সমাজতন্ত্রের বর্ণিল সময়ে প্রকাশিত রাশিয়ান সাহিত্য এখনো মন কাড়ে লাখো মানুষের। তাদের সাদা কালো বই গুলো মনে রঙ লাগিয়ে আস্তে আস্তে এক এক করে তাদের কথা গুলো, আদর্শ গুলো ট্রয় এর ঘোড়ার ন্যায় মনের কুহরে গেথে দিতে থাকে।

সত্য হোক কিংবা মিথ্যা। আলো কিংবা অন্ধকার। ভালো কিংবা মন্দ যাই হোক না কেনো, তাকে কাগজের পাতায় ছাপার অক্ষরে ছাপিয়ে দিন কেবল। আপনার বার্তা মানুষের কাছে পৌছবেই। সেটা আজ হোক কিংবা কাল। মানুষের হৃদয়ে ছাপ রাখার জন্যে এর বিকল্প নেই। আপনার একটা বই, আপনার একটা অস্ত্র।

(লেখা কিছুটা এলোমেলো। পুরানো একটা লেখাকে এক্সটেন্ড করলাম একটু,)