বয়সের সাথে সাহিত্যের সম্পর্ক
কোন গল্প আর উপন্যাসের খুব খুব ভালো লাগার পেছনে গল্পকার এবং ঔপন্যাসিকের মুন্সিয়ানার সাথে পাঠকের পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির প্রভাব ও বেশ ভালোভাবে লক্ষ্যনীয়। ঠিক তেমনভাবে পাঠকের জ্ঞান, মেধা আর প্রজ্ঞা ও ভূমিকা রাখে সেই সাহিত্যকর্মের মূল্যায়নে। এই কারণে একই সাহিত্য সকল সময়ে সকলের নিকট ভালো না লাগাটা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। এবং একই সাহিত্য একই পাঠকের নিকট সময়ের সাথে ভালো লাগা কিংবা না লাগার পরিমাণে হেরফের হতে পারে।
কিশোর বয়সে নব নব আবিষ্কারের, নতুন পরিবেশ, অভিজ্ঞতার দ্বারপ্রান্তে মন ছুয়ে যাওয়া তিন গোয়েন্দা কিংবা কিশোর হরর তার আবেদন হারিয়ে ফেলে কলেজে উঠতেই। ভীষণ অরণ্য কিংবা অথৈ সাগরে হারিয়ে পড়তে চাওয়া সেই কিশোর ছেলের মনে তখন তেল আবিবে গিয়ে মোসাদের হেড কোয়ার্টার ভাঙার স্বপ্ন। মাসুদ রানা হয়ে দেশে বিদেশে ঘুরতে ঘুরতে সদ্য যৌবনে পা দেয়া ছেলেটি তখন নিজের ভালোবাসা খুঁজে সোহানার মাঝে। তিন গোয়েন্দা হয়ে যায় বড্ড ছেলেমানুষী।
এক সময়ে আত্মজীবনীকে বোরিং, একঘেয়েমি মনে করা সেই মনের মাঝে দোলা দিয়ে উঠে রকিব হাসানের "আমার কৈশোর", জসিম উদ্দিনের "জীবন কথা", আল মাহমুদের "জীবন কথা" পড়ে। হারিয়ে যাওয়া কৈশোর আর অতীতের স্মৃতি ঘা দিতে ক্রমাগত। যায় যায় দিন, আর হাহাকার বাড়ে হারিয়ে যাওয়া সময়ের প্রতি। মায়ার বাঁধন আটকে পড়া মনের কোণে জমে ওঠা মেঘ বর্ষণ ঝরায় দুই নয়নের মাঝে।
বন্ধুর কাছ থেকে টাকা ধার করে বইমেলা থেকে "শয়তানের হাতিয়ার রোমান্টিকতা" বই কেনা সেই মনের মাঝে সপ্ন আর হাহাকার জেগে ওঠে মুজতবা আলীর "শবনম", মৈত্রীয় দেবীর "ন হন্যতে", নিমাই ভট্টাচার্য্যের "মেমসাহেব" পড়ে।
আস্তে আস্তে পানসে হতে ওঠে মাসুদ রানা কিংবা মজনুন হতে চাওয়া সেই মন। জীবনের কষাঘাতে চরম বাস্তবতা মুখোমুখি হতে হতে মজনুনের পাগলামি, মাসুদ রানার খুন করার লাইসেন্স মনে হতে থাকে অবিশ্বাস্য। ফিকশন বাদ দিয়ে একে একে ননফিকশন হতে থাকে তার নিত্য সাথী।
হুমায়ূন দিয়ে শুরু করা কোন কোন পাঠকের নিকট এক সময় হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্যিক মর্যাদাই পান না। ব্যর্থ প্রেমের অনলে হয়তো শবনমের স্মৃতি কাতর করে তুলে কাউকে। হাজার ব্যস্ততায় আর ছোটবেলার কথা মনেই থাকেনা কারো কারো। ব্যতিক্রমী শিবলী আজাদ ভাইয়ের মতোন কেউ কেউ হয়ত একটু গরজ করবেন মাঝে মাঝে তাদের দেখা ঢাকাকে তুলে ধরতে।