বাংলাদেশের বাজার: দামের পেছনের কারণ

বাজারের ট্রেন্ড বুঝতে পারা রকেট সাইন্স না। কিন্ত বেশ কিছু ভ্যারিয়েবল এর সাথে সম্পর্কিত। আর বেসিক ল তো আমাদেরকে ক্লাস ৭-৮ এর সমাজ বইতেও শেখানো হয়েছিলো।

চাহিদা বেশি + যোগান কম = দাম বাড়তি
চাহিদা কম + যোগান বেশী = দাম কম

কয়েকটা ট্রেন্ড উল্লেখ করি বাংলাদেশের বাজারের ক্ষেত্রে।

শীতের সময়ে দেখবেন মুরগির দাম অনেক বেশী থাকে। প্রধান কারণ শীতে বিয়ের প্রোগ্রামের আয়োজন হয় বেশী। কমিউনিটি সেন্টার গুলো প্রচুর মুরগীর অর্ডার দিয়ে রাখে।

শীতের সময়ে বাজারের লেবুর সাপ্লাই থাকে কম, আবার দাওয়াতেও প্রচুর লেবু লাগে, তাই লেবুর সংকট এবং লেবুর দাম পুরো শীতকালেই বেশী থাকে। শীত আসার আগে আমাদের এলাকায় ২ হালি ২০ টাকায় ও লেবু কিনেছি।

এবারে বাজারে প্রচুর প্রচুর টমেটো উঠেছে। ১৫-২০ টাকা কেজিতে বেশ লম্বা সময় টমেটো বিক্রি হয়েছে। ১৫-২০ টাকা পিস দামে বেশ বড় বড় ফুলকপি বিক্রি হয়েছে। হিসাব সিম্পল এবারে উৎপাদন আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো ছিলো এই ফসল গুলোর।

একই ব্যাপারটা কাঁচা মরিচের ব্যাপারে চিন্তা করেন। বর্ষার কাঁচামরিচ হয়না। বর্ষার পানিতে কাঁচা মরিচ গাছ ও প্রচুর মারা যায়। এই কারণে বর্ষা পরিবর্তিত সময়ে এবারে দেখবেন হঠাৎ মরিচের দাম অনেক বেড়ে গিয়েছিল। এটা প্রতি বছর ই হয়। একদম নরমাল ঘটনা। এখন দেখেন আবার মরিচের দাম কত কমে এসেছে।

বাজারে কিছুদিনের মধ্যে গরমের সবজি উঠা শুরু হবে , ইতিমধ্যে উঠেছে অনেক জায়গায়। পটল, ঢেঁড়শ, ঝিঙ্গা, পেঁপে। এই সবজি এখন কিনতে যান, আগুনের মতো দাম। কারণ এখনো এইটার সিজন না। কিছু কিছু সোর্স থেকে বাজারে এই সবজি গুলো আসছে, কিন্তু এখনো পুরোদমে আসা শুরু হয়নাই। তাই দাম এখন এতো বেশী। আব্বু কালকে ছোট হাফ কেজির একটা পেঁপের দাম জিজ্ঞেস করে শুনেন ৮০ টাকা চায়।

এগুলো সব ই লোকাল পণ্য, আমাদের বাইরে থেকে ইমপোর্ট করার প্রয়োজন পড়ে না। এই জন্যে এই দাম অনেক প্রেডিক্টেবল। রেগুলার বাজার মনিটর করলেই এইসব পণ্যের বাজার লাইনে রাখা যায়।

একই জিনিস ফলের ক্ষেত্রেও। শীতকালে বাংলাদেশে মূলত তেমন ফল পাওয়া যায়না। এখন বাজারে থাই পেয়ারা আছে ৮০ টাকার, আর কিছু বরই। এটাই সর্বনিম্ন দামের ফল। আর আগে জলপাই ছিলো কিছুদিন। আর দেশী কিছু কমলা পাওয়া গিয়েছিল বেশ কম দামে। বাজারের বর্তমান সব ফল ই ইম্পোর্ট করা লাগে। তাই দাম এতো এতো বেশি। আর এক মাস পরেই বাজার ফলে ভরে যাবে। ইতিমধ্যে প্রচুর তরমুজ উঠে গেছে, কাঁচা আম আসবে। আর নাম না বলি। বাংলাদেশ বছরের ৭মাস ফলের ভ্যারাইটির কোন অভাব নাই।

বাংলাদেশে রোজার শুরুর দিকে সাধারণত জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। এর একটা কারণ, রোজার আগে অনেক ফ্যামিলি একটা বড় ধরণের বাজার করেন। পুরো রোজার মাসে যাতে বাজারে দৌড়াদৌড়ি কম করতে হয় এইজন্যে। বাজারের মুদি দোকানদার রাও সেই অনুসারে বড় ধরণের একটা স্টক করেন রোজা উপলক্ষে। এই রাশ টা খুব লম্বা সময়ের না। রোজার কিছুদিনের মধ্যেই জিনিস পত্রের দাম সাধারণত রোজা পূর্ববর্তী সময়ের মধ্যে চলে আসে।

আবার দেখবেন ঈদের আগে আগে মশলাপাতির দাম অনেক বেড়ে যাবে। রোজার ঈদ, কুরবানীর ঈদ দুই ঈদেই। তাই আপনি যদি একটু চালাক হোন, আপনার কাজ হবে ঈদের আরো আগে আপনার মসলাপাতির বাজার শেষ করে রাখা। তাহলে তখন চড়া দামে কেনার কোন দরকার নাই। আর মশলাপাতির শেল্ফ লাইফ ও অনেক লম্বা।

মোদ্দা কথা সিম্পল। পিক টাইমে দাম কম থাকে, আর্লি টাইমে দাম অনেক বেশী থাকবে। চাহিদা অনেক বেশী হলে বাজারে টান পড়ে যায়, দাম বাড়ে এটাই বাজারের সিস্টেম।

এই বছর বাজারে আওয়ামী সিন্ডিকেট সেভাবে একটিভ নাই। নাসা কোম্পানির মালিক আটক হওয়ার কারণে ইতিমধ্যে এবারে খেজুরের দাম বেশ কম। বিদেশি জিনিস ট্যাক্স, ভ্যাট সহ আরো অনেক চার্জ অ্যাড হয়। যার কারণে দামের আকাশ পাতাল তফাৎ হয় না। কিন্তু আপনি মাঝের সিন্ডিকেট সরায়া দিলে মানুষের হাতের নাগালের বাইরে চলে যায়না নিত্যপণ্যের দাম। ছোলা বুট - বেসনের দাম দেখবেন গতবছরের তুলনায় তেমন হেরফের হয় নাই।

সোশাল মিডিয়ায় জিনিস পত্রের দাম নিয়ে কাইজ্জা করে মিডিয়ার গুলোর ও লাভ পাবলিক সেন্টিমেন্ট নিয়ে খেলতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলো ও এইটা থেকে একটা পয়েন্ট গেইন করার চেষ্টা করে। কিন্তু কয়েকটা সূচক দিয়ে যদি একবার জাজ করেন, তাহলে বাজার অবস্থা কাজ করা সহজ হয় :

সময়
চাহিদা
সরবরাহ

কিন্তু সবচেয়ে বড় কিলার এখানে সিন্ডিকেট। যেকোন দেশের বাজারে সিন্ডিকেট থাকে। সরকারের পক্ষে সিন্ডিকেট একদম ই বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব না। কিন্তু সিন্ডিকেট কে দৌড়ের উপরে রাখা সম্ভব যদি সদিচ্ছা থাকে।