বাচ্চাদের নিয়ে অভিযোগ
এখনকার বাচ্চাদের নিয়ে সবচেয়ে যেই অভিযোগ, তা হলো বাচ্চারা সারাদিন কার্টুন নিয়ে বসে থাকে। এবার ফেনীতে গিয়ে নিজের কাজিনদের কার্যকলাপ কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করলাম। অবজারভেসনটা নতুন কিছু না। কিন্ত নিজের চোখে যা দেখলাম আর বুঝলাম তা নিয়ে একটু লেখা।
(১) বাচ্চারা কার্টুন কেনো দেখে? কার্টুন দেখতে এতো ব্রেন খাটানোর দরকার নেই। একটু কনসান্ট্রেশন আর টাইম দিলেই কার্টুনের গল্প বোঝা যায়। ওদের সাথে দেখতে বসে আমারো মজা লাগসে। নিনজা হাতুড়ি, ডরেমন আরো কি কি জানি দেখে।
(২) বাচ্চারা এনিমেল প্লানেট, ডিসকভারি দেখতে অনেক অনেক আগ্রহী হয়। কিন্ত এই বয়সটা হলো প্রচুর পরিমাণে প্রশ্ন করার বয়স। তাদের মনে অনেক অনেক প্রশ্ন জমা হয়। তাদের এই প্রশ্নগুলোর ইমিডিয়েট উত্তর দরকার। খন একটা বাচ্চা এনিমেল প্লানেট দেখছছে, তার মনে প্রশ্ন জমা হচ্ছে কিন্ত এসব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্যে তার কোন জায়গা নাই, তখন সে এনিমেল প্লানেট দেখবে কেনো ?
আমি যখন ওদের সাথে দেখতে বসলাম তখন ওরা সুন্দর একের পরে এক প্রশ্ন করে যাচ্ছিলো। আমিও যথাসম্ভব চেষ্টা করছিলাম তাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে। আমি তো বেকার মানুষ। কাজ নাই কোন। বসে বসে ওদের কথা শুনছি আর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ওদের আব্বু-আম্মুর তো সেই টাইম ই নাই। বাচ্চাদের টিভিতে বসায়া দিয়ে ঘরের কাজ করতেসেন। নিজেদের কাজ শেষ হলে ওদেরকে পড়াতে বসাচ্ছেন। ওদের মনে পড়ার বইয়ের বাইরে আর কোন কনস্ট্রাকটিভ নলেক ই যাচ্ছেনা কেবল কার্টুন বাদে।
(৩) বাচ্চারা বই পড়া শিখবে তার বাপ-মা যদি বই পড়ে। ঘরে পড়ার কোন পরিবেশ না থাকলে, তার বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম যদি কার্টুন হয়, তবে কিভাবে সে বই পড়া শিখবে? গল্পের বই বাদ দেই, হোয়াাই নট কমিকস ? ভিজুয়ালি এট্রাক্ট করতে পারে বাচ্চাদের এই কমিকসগুলো।
(৪) ইন্ডিয়ার আধিপত্য়বাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার বাবাও কি করতে পারছে তার ঘরের মধ্যে ? ওদের হিন্দীতে কথা বলার দক্ষতা দেখে আমি স্তম্ভিত। এমনকি কালকে পাশের বিল্ডিংয়ের থেকে কয়েকটা বাচ্চাদের খেলার সময়কার কথোপকথন শুনছিলাম। মারামারি খেলার সময়ে একজন আরেকজনকে হুমকিধামকি দিচ্ছে হিন্দীতে।
(৫) বাচ্চারা কথা বলতে ভালোবাসে। প্রশ্ন করতে ভালোবাসে। আর এই জিনিসটাতেই বাবা-মায়েরা সবচেয়ে বেশী বাধা দেয়। কথা বলতে গেলেই হুশ। আপনি নিজে বাচ্চাকে টাইম না দিলে দিবে কে? আপনি কথা না বললে বলবে কে? বাসে আমি ছোট এক কাজিনের সাথে বসছি। সে একের পরে এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে, আমিও ধৈর্য ধরে চেষ্টা করছিলাম সেগুলের উত্তর দেওয়ার। এক সাইডের থেকে ওর বাবা, আরেক সাইড থেকে ওর মা বার বার ওকে থামতে বলছিলো। ওর মনে প্রশ্ন আসছে, কথা আসছে আপনি তাকে বাধা দিচ্ছেন কেনো ? এই বাচ্চাকেই আপনি কার্টুন দেখার জন্যে বোকা দেন? কার্টুন না দেখলে ও দেখবে কি? এনিমেল প্লানেোট দেখতে লাগলে তো আপনি ওর প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে পারেন না। প্রশ্ন করতে লাগলে চুপ করিয়ে দেন। বাচ্চাদের কথা বলতে দিন প্লীজ। ও যতক্ষণ বলতে চায় আপনি একটু টাইম করে ওর কথা শুনুন। বুড়ো বয়সে আমার বাচ্চা কোন কথা শুনেনা বলে লাভ নেই। আপনি ওর কথা শুনেন নি। ও শুনবে কেনো ?
আরো কি কি জানি ছিলো ভুলে গেছি।
এসব হয়তো চেন্জ হবে, বাবা-মায়েরা বুঝতে শিখবে একসময়ে। কিন্ত মনে রাখা লাগবে যযে, আমরা এসবের জন্যে কাজ করতে করতে একটা জেনারেশন তৈরি হয়ে গেছে অলরেডি। যাদেরকে পরবর্তীতে গাইড করা হবে অনেক অনেক কঠিন।