একদিন তো মরেই যাবো
রলিন ভাইদের ১০ তলা বিল্ডিংয়ের ছাদে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিলাম সন্ধ্যার পরে। দূর সীমার মধ্যে বহুদুর পর্যন্ত বিরাট অট্টালিকা, ফ্লাই ওভারে চলা গাড়ি, অন্ধকারে শূণ্য খেলার মাঠ। কুয়াশা আস্তে আস্তে ঢেকে দিচ্ছিলো দৃষ্টিসীমার মধ্যকার অনেক কিছুই।
রেলিং টা বেশ চওড়া। সাইড দিয়ে নিচে তাকাতে দেখা যায় যে, আস্তে আস্তে কমে আসছে মানুষজনের চলাচল। রিকশা চলছে অল্প। যারা শীতের কাপড় পড়ে বের হয়নি তারা ভদ্দরলোকের মতো পকেটে হাত দিয়ে হাটছে।
আচ্ছা, এখন যদি এই ১০ তলার উপর থেকে লাফ দেই তো কেমন হয়? ক্ষণিকের জন্যে স্কাই-ডাইভিংয়ের অভিজ্ঞতা তো মন্দ হয় না। কানটা ঢেকে নিবো আগে থেকে হুডি দিয়ে। নাহলে তো ঠান্ডা লাগবে।
মাটিতে লাফ দিলে, বিড়ালের পা আগে পড়ে সব সময়। মানুষ তো বিড়াল না। আমার কোন অংশটা আগে পড়বে মাটিতে? মাথা? ফ্রন্টাল অথবা প্যারিয়েটাল বোন-টা মনে হয় আগে ভেঙে চুড়মুচুড় হয়ে যাবে। হোয়াইট ম্যাটার আর গ্রে ম্যাটার গুলো ছড়িয়ে পড়বে এদিক-ওদিক।
প্রথম ধাক্কায় ই পুরো মুখটা চেনার অযোগ্য হয়ে যাবে। যেই মুখটাতে আব্বু-আম্মু চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিতো এক সময়ে, তাদের চির-পরিচিত সেই মুখটি কয়েক সেকেন্ডেই অচেনা হয়ে যাবে। তাদের আদর-যত্নে বড় হয়ে ওঠা ছোট্ট শরীরটি, আর হয়তো তাদের সামনে ঘুরে-ফিরে বেড়াবে না।
হাসবে না। এলোমেলো সুরে গান গেয়ে বাসার কাউকে বিরক্ত করবে না। হঠাত হঠাত চিতকার করে উঠে ভয় পাইয়ে দিবে না কাউকে। গভীর রাত পর্যন্ত কি-বোর্ডের খটাখট শব্দ আর হয়তো কারো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাবেনা। ভর্তা খাওয়ার বায়না ধরবে না। ফিরতে দেরী হচ্ছে কেনো ভেবে ভেবে আর কাউকে হয়তো সে আর চিন্তিত করবেনা।
"ছেলেটা আমার কথা একেবারে শুনে না" কিংবা "আমার কথা শুনলে তোর আজ আর এই দশা হতোনা" - কথাগুলো ছেলেটার আর শোনা লাগতো না। সুন্দর ভবিষ্যতের কথা ভেবে আর হয়তো তার চুল পাকতো না।
অনেক কিছুই হতো আবার অনেক কিছুই হতোনা। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে চক্কর দেওয়া থামিয়ে দিতোনা। সে না থাকলেও আরো অনেক যুবকের মনে হাহাকার জাগাতে নিয়মিত হাজির হতো ভরা পূর্ণিমার একাকি চাঁদটি।
কিছুদিন কিছু মানুষ হয়তো কাঁদবে। বাবা-মার সাজানো সংসার, তাঁদের লালিত স্বপ্ন ভেঙেচুড়ে যেতো। তারপর....... আর সবকিছুর মতো সবাই ভুলে যেতো। সময়ে-অসময়ে যাদের রঙিন জীবনে ছেলেটা ক্ষণিকের জন্যে এসেছিলো কিছু স্বপ্ন দেখিয়ে, তারা হয়তো মাঝে মাঝে মনে করতো তাঁকে। কেউ কেউ হয়তো চোখের জলও ফেলতো দু-এক ফোঁটা। এক সময়ে সেই জল ও শেষ হয়ে আসতো।
কিছু স্মৃতি, কিছু আশা, কিছু হাহাকার, কিছু ভালোবাসা, কিছু অব্যক্ত অনুভূতি নিয়ে সে হয়তো হারিয়ে যেতো মহাকালের গর্ভে। সবারই তো যেতে হবে এক সময়ে।
(বন্ধু রাহাত বলতেসিলো, আমার মনে নাকি রঙ লাগসে। রঙ কমানোর চেষ্টা করলাম। :3 )