বই রিভিউ - খাকি চত্বরের খোয়ারি

ক্যাডেট কলেজ নিয়ে আমার আগ্রহ জন্ম হয় অনেক পরে। আমার আশেপাশের ভালো ছাত্ররা যখন ক্যাডেট কলেজের ভর্তি হওয়ার জন্য MSC ক্যাডেট কলেজে দৌড়াদৌড়ি করছিলো রাতদিন, আমি তখন নিরাসক্ত মনে তাদের দৌড়ঝাঁপ দেখতাম। লেখকের মতোন আমার কোন মামা ছিলোনা ক্যাডেটের জন্যে ইন্সপায়ার করার জন্যে। ক্যাডেটের ব্যাপারে হালকা আগ্রহও তৈরি হয় কলেজে ওঠার পরে যখন প্রথম বাসায় কম্পিউটার পেলাম আর ক্যাডেট কলেজ ব্লগে হালকা পাতলা ঢু মারা শুরু করলাম। তাদের হাসি কান্নার বর্ণনার সাথে আমিও যেন একাত্ম হয়ে যেতাম।

সময় বয়ে যায়, ফেসবুকে কিছু ক্যাডেটের এক্টিভিটি দেখি। তাদের লাইফের একমপ্লিশ্মেন্ট দেখি। মনের মধ্যে হালকা চিনচিনে ব্যাথা হয়। সেই ব্যাথা দিনে দিনে বাড়ে বই কমে না। সেই ব্যাথা আর বাড়াতে চাইনি বলে বইটা না পরে রেখে দিয়েছিলাম এতদিন যাবত। কালকে খেলা দেখতে দেখতে হঠাত ভাবলাম যে, পড়েই দেখিনা কি আছে। লেখকের নিজের জীবনের কাহিনী কিনা আমি জানিনা, কিন্তু ক্যাডেট লাইফের একটা চিত্র তুলে ধরেছেন তিনি। প্রতিদিন সকালে ড্রিল, পিটি, প্রেপ, নামাজ, একটা শৃঙ্খলিত জীবনের বর্ণনা নিয়ে লেখা বইটি। সাথে আছে বাধ ভাঙ্গা উচ্ছ্বাস, নিয়ম ভাঙ্গার সর্বোচ্চ শাস্তির ভয়াবহতা।

আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ এই বইটি সিরিয়াস কিছু প্রশ্ন তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন এবং এর মধ্যে কিছু ছিল নিতান্তই বালখিল্যতা। প্রশ্নগুলোর কোন উত্তর ও পাঠকের কাছে দেওয়ার চেষ্টা করেন নি। মিলন চরিত্রের মাধ্যমে তিনি "প্রগতিশীল", অস্থিরমতি এক চরিত্র নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন। শাহাদুজ্জানের জীবনানন্দ দাস প্রীতি বেশ প্রবল। এর প্রমাণ যেমন আমরা পাই তার ২০১৭ এর বই মেলায় বের হওয়া "একজন কমলালেবু" বইয়ে। এই বইয়ে তেমনই মিলন চরিত্রেও উনি তার এই প্রীতি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এই "প্রগতিশীল" বালক আবার তার ধর্মের শিক্ষককে লজিকবিহীন অদ্ভুত প্রশ্ন করে চমকে দিতে চায়। এবং ঐ হুজুরটি ঐ বালকের প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে তাকে শাস্তি দেন। স্বাভাবিক এক বামের থেকে এসবের থেকে উন্নত কোন চিত্র আশাও করিনা ।

ক্যাডেট কলেজের অবস্থানের যৌক্তিকতা নিয়ে তার মনের তিক্ততা লুকিয়ে রাখা যায়নি। স্পেশালি বাঙ্গাল আর ইংরেজপনার যৌথ মিলনে সেখানে যেই কালচার তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে লেখকের বড্ড আপত্তি। বইয়ের শেষে মিলন নামের অপরিপক্ব মননের বালকটি মনের মধ্যে প্রশ্ন আর উত্তরের সামঞ্জস্যহীনতা এবং পরিবারের চাপের ভার সইতে না পেতে আত্মহত্যা। যেই বালক জগত দেখতে চেয়েছিল সাইকেলে চড়ে, প্রশ্নের উত্তর না খুঁজে ট্রেনের চাকার নীচে তার ঝাপ দেওয়াটা লেখকের অস্থির মনোবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ।

ছোটখাট যেই কয়টি স্মৃতিকথা টাইপের বই পড়েছি আমার কাছে মনে হয়েছে যে, লেখকের জীবনের সাথে পাঠককে একাত্ম করে ফেলার গুণ ছিল প্রতিটিতে। গল্পের প্রধান চরিত্র যেন আমার কথাই বলছে, এই বইয়ে তেমন কোন অনুভূতি পাইনি।