“ন হন্যতে” নিয়ে টুকরালাপ

১০দিন আগেও আমাকে কেউ রোমান্টিক উপন্যাসের সাজেশন চাইলে শুধু সৈয়দ মুজতবা আলীর “শবনম” পড়তে বলতাম। এখন তার সাথে এই বইয়ের নাম ও যোগ হচ্ছে।
“ন হণ্যতে” কি ধরণের উপন্যাস আসলে? আত্মজীবনীমূলক নাকি রোমান্টিক। রোমান্টিক আত্মজীবনী। একজন মহিলার জীবনের ৪২টা বছরের কাহিনী। একটা প্রেমের হাজার বছরের কাহিনী।
সময়ের সমুদ্র পারায়ে,
যে জীবন গিয়েছে হারায়ে
যদি সে ফিরেই ফের আস
আলো হয়ে মনের আকাশে
চন্দ্রতারকার সাথে
বসে একাসনে
সে সূর্যস্বরূপ –
আমাকে দেখাবে বিশ্বরূপ –
তখন আর অন্যপন্থা নাই
প্রানিধায় কায়ং প্রসন্নতা চাই।
উপন্যাসটার প্রধান দিক হলো এর ভাষাশৈলী এবং রবীন্দ্রনাথের ব্যবহার উপন্যাসের প্রতিটি ছত্রে। আবেগকে ফুটিয়ে তোলার অসাধারণ ভঙ্গি মোহাবিষ্ট করে রেখেছে আমাকে প্রথম থেকেই।
এ সংসারে একদিন নব বধু বেশে
তুমি যে আমার পাশে দাঁড়াইলে এসে,
রাখিলে আমার হাতে কম্পমান হাত,
সে কি অদৃষ্টের খেলা , সে কি অকস্মাৎ,
শুধু এক মুহূর্তের নহে এ ঘটনা,
অনাদিকালের এই ছিলো মন্ত্রণা।
প্রথম প্রেম! এক মধুর অনভূতি। জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত তার স্মৃতি হতে দূরে সরিয়ে রাখে হয়তো, কিন্ত অব্যক্ত বালুচরে স্মৃতি কিন্ত জমা হয়েই থাকে যা কিনা তাকে দংশন করে সময়ে সময়ে।রবীন্দ্রনাথকে অনুভব করবেন পুরো উপন্যাসের পাতায় পাতায়। লেখিকার অনুভূতির সাথে ডুবে ছিলাম সমগ্রক্ষণ। তার ব্যাকুলতা ব্যাকুল করেছে আমারে। হারায়েছিলাম, আচ্ছন্ন হয়েছিলাম তার ভাবপ্রকাশের ভঙ্গি দেখে।
Words are but loads of chain in my fight of fire. I pant. I sink. I expire.”
ভয় নিত্য জেগে আছে। প্রেমের শিয়র মিলন বক্ষ মাঝে। আনন্দের হ্রদস্পন্দন কাঁপিতেছে ক্ষণে ক্ষণে বেদনার রূদ্র দেবতা যে।”
জীবনের কঠিন মুহুর্তে নায়িকার মাঝে আরো ক্ষিপ্ততার প্রত্যাশা করেছিলাম। তার চরিত্রের সাথে মিলে যাওয়া দৃঢ়তার আশা করেছিলাম আরো।
বিয়ে আসলে কি ? শুধুই কি একসাথে বসবাস ? সেখানে ভালোবাসার স্থান আসলে কোথায়? দুইজন মানুষ পাশাপাশি শয্যাশায়ী। কিন্ত তাদের মধ্যে ভালোবাসা আসলে কোথায়? নাকি বিয়ে আসলে ভালোবাসা নয়, মায়ার চাদরে চালিয়ে নেওয়া যাপিত জীবন।
অমৃতার স্বামীর নিপাট ভালোমানুষী মনে রবে অজান্তেই।
কি হয় আসলে উপন্যাসের শেষ পর্যন্ত ? ৪২ বছর পরে অমৃতা কি পায় তার প্রথম প্রেমের দেখা ?