ঢাকার বাইরে

"ঢাকা শহর থেকে যদি বের হয়ে যেতে পারতাম!!!" মনের এক কোণে স্বপ্নটাকে লুকিয়ে রেখেছিলাম সবসময়। শহর থেকে একটু হলেও দুরে। আম্মুকে প্রায়ই এখনো বলি, “চলেন, বাড়িতে চলে যাই। ঢাকা থাকবোনা আর।” আম্মু বলেন, “খাবি কি? সব তো ঢাকায়।” বাধ্য হয়েই মাথা নাড়াই সম্মতির।

খুব বেশীকিছু তো দরকার নেই আমার ঘরে। ছোট্ট একটা ঘর। সামনে একটা সান বাধানো পুকুর। আর আশেপাশে কিছু ফলের গাছও নাহয় থাকলো। নাহ। এমন কপাল কি আছে আর আমার! স্বপ্নকে তাই বলেছিলাম, “স্বপ্ন তুই থাক দক্ষিণ কোণে লুকিয়ে।”

প্রথম কর্মদিবস ভেবে সকাল সকাল ই পৌছেছিলাম BSMRAU। যেয়ে দেখি, আজকে তো পূজা। সব বন্ধ। অফিস বাদ। একদিক দিয়ে ভালোই হলো। থাকার ব্যবস্থা করা দরকার। এক জায়গায় কথা বলে রেখেছিলো পলাশ ভাই। চাবি নিয়ে রুমে গিয়ে পৌছলাম।

আধাপাকা একটা ঘর। উপরে টিন। পাশাপাশি তিনটা রুম। একটায় আমি থাকবো, আরেকটায় গার্মেন্টসে কাজ করেন ইকবাল ভাই। বাকি রুমটায় কেয়ারটেকার সাহেবের ছোট্ট সংসার।

ঘরের সামনে বিরাট এক বাগান। আমার সাইডের বারান্দার পাশে একটা মেহেদি গাছ লাগানো। বাকি পুরো বাগান জুড়ে বাড়িওয়ালার বিরাট ফলের বাগান। আমে মুকুল ধরেছে প্রচুর। বরইয়ের ভারে গাছটা নুয়ে আছে। কাঠাল, কলা, পেয়ারা কি ফল নেই। একটু পাশেই সান বাধানো একটা পুকুর। খুব বেশী বড় না। কিন্ত পুকুর তো। পুকুর পাড়ে নারিকেল গাছ অনেকগুলো। একপাশে কেয়ারটেকার গোয়ালঘর। একটা খুপরিতে দেখলাম মোরগ-মুরগী বেঁধে রাখা হয়েছে। মনে হয় পোষ মানানোর চেষ্টা করা হবে। নিচে সবুজ ঘাসে পা দিতেই শিশির ভিজিয়ে দিলো পায়ের পাতা।

টিনের চাল। গরম কালে বেশ কষ্ট হবে হয়তো থাকতে। ইকবাল ভাই বললেন, “রাতের ১০টা পর্যন্ত পুকুর পারে চুপচাপ বসে থাকি আমি। নীরবতা আর ঠান্ডা বাতাস। পরে রুমে ঢুকে ফ্যান ছেড়ে দেই। গরম আর টের পাইনা।”

চিরতরের জন্যে না হলেও কিছুদিনের জন্যে নিজের স্বপ্নের একটা জায়গা পেয়েছি হয়তো থাকার জন্যে। স্বপ্ন একা আসেনা। হয়তো অন্য কোন স্বপ্নকে মাড়িয়ে উঠে আসে। দিন যাক। দেখি কি অধরা রয়ে গিয়েছে এটার জন্যে। আলহামদুলিল্লাহ।