আল-জাজিরার Scent of the Heaven ডকুমেন্টারির রিভিউ

কয়েকদিন আগে আল জাজিরার "Scent of the Heaven" ডকুমেন্টারি দেইখা এখন আউদ পুড়ায়া তার ঘ্রাণ শুঁকতে ইচ্ছা হইতেসে। কেজি ২মিলিয়ন ডলারের আউদ লাগবেনা আমার। আমি শুধু পুড়াইয়া ঘ্রাণ নেওয়ার, আমার বসনে আউদের খুশবু মাখবার অভিজ্ঞতা লইবার চাই।

এইযে আমার মত নাখান্দা, নালায়েক একজন আউদ পুড়াইতে চাইসে, আউদের খুশবুতে মাতোয়ারা হইতে চাইতেসে, এমন তো শুধু আমি না। আউদের খোঁজ পাওয়া লক্ষ জন আজকে আউদকে আপন করে নিতে চাইতেসেন। এই করতে করতে সারা দুনিয়াতে আজ দিনকে দিন আউদের জনপ্রিয়তা, আজ চাহিদা বেড়ে চলতেসে। মিডিয়ার কল্যাণে এক সময়কার সাধারণ একটা কালচার, আজকে সারা দুনিয়ায় ছড়াইয়া পড়তেসে। যার ফলে আউদের ডিমান্ড বেড়েছে, দাম বেড়েছে এবং বন- জঙ্গল থেকে প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে ওঠা আউদ গাছের পরিমাণ ভয়াবহভাবে কমে গিয়েছে। কমার্শিয়াল উদ্দ্যেশে যেসব বাগান প্রস্তুত করে আউদের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়, তাতে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা আউদের যে বন্য প্রকৃতি/খুশবু থাকে পুরোপুরি অনুপস্থিতি। KFC এর রসকষহীন মোটা মোটা রানের মধ্যে তো আপনে দেশী মুরগীর ভাইটামিন আর স্বাদ পাইবেন না। কমার্শিয়াল উৎপাদনের কাছে শুধু পরিমাণ বৃদ্ধি মূল লক্ষ্য, কোয়ালিটি নয়। ম্যাস পিপলের কাছে অধিক হারে বিপুল পরিমাণ প্রোডাক্ট পৌঁছে দেওয়া থাকে তার মূল লক্ষ্য, এর মাধ্যমে সে দুধের স্বাদ, পানি মিশ্রিত দুধের মাধ্যমে পাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে।

আর অবশ্যই যেখানে ডিমান্ড বেশী, কিন্তু সাপ্লাই কম, সেখানে বেআইনী কাজের রাস্তা খুলে যায় শত শত। আউদের সাপ্লাই কমে যাওয়ায় এটা নিয়ে সরকারী কর্মচারীদের দুর্নীতি, চোরাকারবারী ব্যাপক হারে বেড়ে গিয়েছে ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়াতে। জাপানি একজন বায়ার কম্বোডিয়ার একটা মন্দিরের ২০০ বছর পুরানো আউদ গাছ কিনতে চেয়েছে ২৩ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে। এর থেকে এই ব্যবসার ব্যাপকতা কিছুটা আঁচ করা যায় শুধু। আশ্চর্যের ব্যাপার লেগেছে আমার কাছে চায়নাদের বিজনেস টেকনিকটা। ২০০০ সাল থেকে তারাও এখন আউদের মার্কেটের মস্ত বড় বায়ার। কিন্তু তারা পুড়িয়ে সুগন্ধী হিসেবে ব্যাবহার করার জন্যে আউদ কিনেন না। তারা মূলত বাড়িতে সাজিয়ে রেখে মানুষজনকে দেখানোর জন্যে এবং ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে আউদ কিনে রাখেন। আউদ যেহেতু যত পুরনো হয়, তত বেশী দামী, তারা পরবর্তীতে আরো বেশি দামে বিক্রির জন্যে কিনে রাখে কালো রঙের এই টুকরোগুলো।

সুগন্ধীর প্রতি মানুষের দুর্বলতা দীর্ঘদিনের। অনেকের কাছে একটা পার্টিকুলার খুশবু তার আইডেন্টিটি বহন করে। পার্সোনালি আমার ফ্রেশ-রিফ্রেশিং-ন্যাচারাল টোন পছন্দের। কখনো আতর কিনতে এ গেলে এই টাইপের খুশবু আমাকে টানে সবসময়। Perfumance এর ওয়েবসাইটে আর ফেসবুক পেজে ঢুকলে শুধু আন্দাজ করা যায় মানুষ কিভাবে দিনকে দিন সুগন্ধীর প্রতি আরো বেশী আগ্রহী হয়ে উঠছে। সুবাস হয়ে উঠছে আবিজাত্যের নিশান।

অর্থবিত্ত মানুষের মধ্যে অনেক অনেক কৃত্তিম জরুরৎ তৈরি করে। কোন জরুরৎ না থাকলেও তার মনে জিনিসটা পাওয়ার একটা অদম্য খায়েশ তৈরি করে। ব্যাপারটা হয়তো কেবল অর্থের সাথে রিলেটেড না। আমরা হয়তো কেবল একটা স্রোতের সাথে নিজেরে সম্পর্ক যুক্ত রাখতে পছন্দ করি। বর্তমান বাজার অর্থনীতিতে মার্কেটিং গুরুরা কিভাবে মানুষের ভোদাই বানায়া নতুন নতুন জিনিস গোছাইয়া দেওয়া যায়, কিভাবে কৃত্রিম চাহিদা তৈয়ার কইরা তার কাছে পণ্য বিক্রয় করা যায়, সেই ট্রিকস শেখায় অনবরত। এই জন্যে, ব্যাক্তিগত ভাবে বাংলাদেশের/ঢাকার পরিপ্রেক্ষিতে আমি প্রাইভেটকার ব্যাবহারের পক্ষপাতী না হইলেও, MKBHD এর গাড়ি লইয়া বানানো ভিডিও গুলান একটাও মিস দেইনা, মনের মধ্যে একটা ইলেকট্রিক গাড়ি চালানোর বাচ্চা স্বপ্ন পয়দা কইরা রাখসি। এমন হাজারো কৃত্তিম জরুরৎ ডালপালা পেলে নিত্যনতুন। কোন কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করা খারাপ কিছু না। কিন্তু এমন অনেক অহেতুক প্রয়োজনীয়তা দিন শেষে আমাদের আল্টিমেট গোল থেইকা দুরে সরাইয়া খোয়াবের মধ্যে ডুবাইয়া রাখে। জোকারের মতো কইতে পারেন, "Why So Serious?" "সামান্য জিনিস ই তো কিনতে চাইসি"। দুনিয়ার ৭৫০ কোটি মানুষের সামান্য সামান্য অহেতুক জরুরৎসমুহ একত্র হইয়া আল্লাহর বানানো এই দুনিয়ার উপরেই যে প্রেশার ফেলে সেটাও বুঝার দরকার আছে। এই জন্যে জীবন থেইকা অহেতুক জরুরত যতোটা সম্ভব কমাইয়া আনতে পারলে আলটিমেটলি আমাদেরই লাভ।