কৈশোর ও সেবা প্রকাশনী

বই লাভার'স পোলাপান (Boi lover's polapan) পাগলা অর্বাচীন ফাহিমের পোস্ট পড়ে অজান্তেই মুখে একটি মুচকি হাসি চলে এলো। পোস্টটা সেবা প্রকাশনী নিয়ে। ভাবছিলাম, সবগুলাই পাগল ছিলো এক কালে। কেউ বেশী আর কেউ কম। আর একেকজনের পাগলামি একেক জিনিস নিয়ে। কৈশোরের সময়কালে তিন গোয়েন্দা আরেকটু বড় হয়ে মাসুদ রানা যারা না পড়েছে, আমি মনে করি তাদের জীবনের একটা বড় মজার পার্ট মিস করেছে।

হায় সেবা!!! ক্লাস 3 কিংবা 4 এ প্রথম এর সাথে পরিচয় তিন গোয়েন্দার মাধ্যমে। আমার এক কাকার বাসায় যেতাম তখন প্রায়ই ক্রিকেট খেলতে। উনি আমার থেকে ৪-৫বছরের সিনিয়র। সো, তিন গোয়ান্দা পড়ার বয়স তখন ওনার প্রায় শেষের দিকে। তিন গোয়েন্দা নিয়ে ওনার ক্রেজিনেসটাও তাই তখন পতন্মুখ। তার টেবিলের উপর দেখতে পাই তিন গোয়েন্দার কয়েকটা ভলিউম। ওনার কাছে অনুমতি নিয়ে বাসায় নিয়ে আসলাম ওগুলো। ওগুলা শেষ হলে ফেরত দিয়ে আরো কয়েকটা। ওগুলা শেষ হলে আরো। এভাবে ওনার কেনা সব বই ই আমার শেষ হয়ে গেলো একসময়। ওনার বাসায় এখন বর্তমানে একটা তিন গোয়েন্দাও নেই। সব নিয়ে এসেছি আমার কাছে এক সময় :P

এরপরে শুরু হলো অন্যদের থেকে এনে পড়া। ততদিনে আমিও কেনা শুরু করে দিয়েছি। আর বই কেনার টাকা ? প্রথম দিকে ঈদের সেলামি দিয়ে আর শেষের দিকে ভাড়া আর টিফিনের টাকা জমিয়ে। প্রথম কেনা সেবার বই ছিলো, "তিন গোয়েন্দা ভলিউম-১" ক্লাস ৬ এ থাকাকালীন সময়ে। মোটামুটি ক্লাস ৯ পর্যন্ত পুরো মাত্রায় তিন গোয়েন্দায় এডিক্টেড ছিলাম। তখনও মাসুদ রানা ভালো লাগতে শুরু করেনি।

এবার কিছু বলি বই পড়ার স্টাইল নিয়ে। মোটামুটি ভালো একটা স্কুলে ছিলাম। পড়ালেখায় কড়াকড়িও ছিলো। আম্মুও অনেক সিরিয়াস টাইপের। পড়ার বইয়ের বাইরের কিছু তেমন একটা পছন্দ করতেন না। তবে পড়ার টাইম ছাড়া পড়তে গেলে সমস্যা নাই। কিন্তু "তিন গোয়েন্দা" পড়ার ক্ষেত্রে কি আর পড়ার টাইম মানা যায় ? বইয়ের আড়ালে লুকিয়ে পড়তে গিয়ে যে কত্তবার ধরা খেয়েছি!!!

মাদারটেকে একটা বাসায় থাকতাম নিচ তলায়। রাস্তার লাইটের আলো ঘরে হালকা মতো এসে পড়তো। সবাই ঘুমিয়ে পড়তো আর আমার তিন গোয়েন্দা পড়া শুরু হতো সেই সময়।

শার্ট বা গেন্জির তলায় লুকিয়ে চলে যেতাম টয়লেটে। পাতা উল্টানোর আওয়াজ যাতে বাইরে থেকে না পাওয়া যায় সেইজন্য পানির কল চালিয়ে দিতাম। আম্মু ভাবতো, "ছেলেটার হলো কি! পেট খারাপ নাকি! তো ঘন ঘন টয়লেটে কি করে" :P

বাসায় মোবাইল আসার পরে, আম্মুর মোবাইলটা রাতে আমি এনে রাখতাম। মোবাইলের আলোতে যদিও তা বই পড়ার জন্য যথেষ্ট। প্রচন্ড গরমের রাতে কাথা মুড়ি দিয়ে মোবাইলের আলোতে বই পড়তাম।

পাশের বিল্ডিংয়ের রান্নাঘরের লাইট টা জ্বলতো সারাটা রাত। সবাই ঘুমানোর পর, আমি জানালার পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে যেতাম একটা বই নিয়ে। বিছানায় কোল বালিশ সুন্দর মতো সাজিয়ে রাখতাম, যাতে রাতের বেলা আব্বু কিংবা আম্মু চেকিংয়ে এলে টের না পায়।

এমন পাগলামি কেবল সেবা'র বইয়ের কারণেই সম্ভব। ধন্যবাদ সেবা প্রকাশনী আমাদের বোরিং কৈশোর কে প্রাণব্ন্ত করার জন্য। ঢাকায় বসে রকি বীচের পাশের প্রশান্ত মহাসাগরকে আমাদের হাতের নাগালে আআনার জন্য। আমাজনের গহীন জন্গলে আমাদের শিকারের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। জলদস্যুর দ্বীপে গিয়ে গুপ্তধন উদ্ধারে মেতে উঠতে দেওয়ার জন্য।

অনেক কিছু লেখে ফেললাম। আর না। সেবা নিয়ে লেখতে চাইলে আরো অনেক কিছু মনে পড়ে যায়। ধন্যবাদ ফাহিমকে ট্যাগ করে স্মৃতি রোমন্থনের সুযোগ দেওয়ার জন্য।

রাহতরে কালকে কইলাম যে, "বিয়ার সময়ে ৫ট্রাক বই যৌতুক নিবি।"
আমারে কইলো, "রাখুম কই?"
আমি কইলাম, "খাটের কি দরকার? বইয়ের উপরে ঘুমাবি।"

বেচারা ভাবসিলো আমি ফাইজলামি করতেসি। ইন্টার শেষ পর্যন্ত ও আমার বুক সেল্ফ ছিলোনা। আমার এত্তগুলা তিন গোয়েন্দা রাখি কই? খাটের তোষকের নিচে রাখতাম আমার বইগুলো। রাতে ঘুমাতাম ওগুলার উপরে। পুরো খাটজুড়ে তিন গোয়েন্দা বিছিয়ে, তার উপরে তোষক। যখন আর একটা করে রাখার পরে জায়গা কুলাইলো না, তখন ডাবল পার্টিশনে রাখা শুরু করলাম।

কত অজনা স্মৃতি, চোখ রাঙানো, আম্মুর ঝাড়ি সেবাকে ঘিরে।
হায় সেবা! হায় কৈশোর!!!